Tuesday 13 November 2012

বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের ইতিহাস ও সুর সন্ধানে






আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস,
     মা, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।
মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
     মরি হায়, হায় রে
মা, অঘ্রাণে তোর ভরা ক্ষেতে, আমি কি দেখেছি মধুর হাসি।
কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো
     মরি হায়, হায় রে
মা, তো বদনখানি মলিন হলে,
     মা, আমি নয়ন জলে ভাসি।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একটি বিখ্যাত কবিতা(১৯০৫)’ এই প্রথম ১০ লাইন স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে পরিচিতি পায়
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধোত্তর পরিচিতি পাওয়ার পর আমাদের জাতীয় সঙ্গীত ১৩ জানুয়ারি, ১৯৭২ সালে জাতীয় সংসদ কর্তৃক স্বীকৃতি পায়
My beloved Bengal
My Bengal of Gold, I love you.
Forever your skies,
Your air set my heart in tune
As if it were a flute.
In spring, O mother mine,
The fragrance from your mango groves
Makes me wild with joy,
Ah, what a thrill!
In autumn, O mother mine,
In the full blossomed paddy fields
I have seen spread all over sweet smiles.
Ah, what beauty, what shades,
What an affection, and what tenderness!
What a quilt have you spread
At the feet of banyan trees
And along the banks of rivers!
O mother mine, words from your lips
Are like nectar to my ears.
Ah, what a thrill!
If sadness, O mother mine,
Casts a gloom on your face,
My eyes are filled with tears!
 ¤══¤۩۞۩¤══¤    ¤══¤۩۞۩¤══¤    ¤══¤۩۞۩¤══¤  ¤══¤۩۞۩¤══¤  ¤══¤۩۞۩¤══¤  ¤══¤۩۞۩¤══¤
  বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতআমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসিএর ইংরেজী অনুবাদ করেছেন- সৈয়দ আলী আহাসান
আমার সোনারবাংলা গানটি রচিতহয়েছিল ১৯০৫সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে। গানটিরপাণ্ডুলিপি পাওয়াযায়নি, তাই এরসঠিক রচনাকাল জানাযায় না। সত্যেনরায়ের রচনা থেকেজানা যায়, ১৯০৫সালের অগস্টকলকাতার টাউনহলে আয়োজিত একটিপ্রতিবাদ সভায়এই গানটি প্রথমগীত হয়েছিল। এইবছরই সেপ্টেম্বর (১৩১২ বঙ্গাব্দের ২২ভাদ্র) সঞ্জীবনী পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের সাক্ষরে গানটি মুদ্রিত হয়।এই বছর বঙ্গদর্শন পত্রিকার আশ্বিনসংখ্যাতেও গানটিমুদ্রিত হয়েছিল। তবে অগস্টউক্ত সভায় এইগানটি গীত হওয়ারকোনো প্রমাণ পাওয়াযায় না। বিশিষ্ট রবীন্দ্রজীবনীকার প্রশান্তকুমার পালের মতে, আমার সোনার বাংলা১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২৫অগস্ট কলকাতার টাউনহলে অবস্থা ব্যবস্থা প্রবন্ধ পাঠের আসরে প্রথমগীত হয়েছিল
আমার সোনারবাংলা গানটি রচিতহয়েছিল শিলাইদহের ডাক-পিয়ন গগনহরকরা রচিত আমিকোথায় পাব তারেআমার মনের মানুষযে রে গানটিরসুরের অনুষঙ্গে।  সরলাদেবী চৌধুরানী ইতিপূর্বে ১৩০৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখমাসে তাঁর শতগানসংকলনে গগন হরকরারচিত গানটির স্বরলিপি প্রকাশ করেছিলেন। উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথের বঙ্গভঙ্গ-সমসাময়িক অনেকস্বদেশী গানেরসুরই এই স্বরলিপি গ্রন্থ থেকে গৃহীতহয়েছিল। যদিওপূর্ববঙ্গের বাউল ভাটিয়ালি সুরেরসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পরিচিতি ইতিপূর্বেই হয়েছিল বলে জানা যায়।১৮৮৯-১৯০১ সময়কালে পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে জমিদারির কাজেভ্রমণ বসবাসের সময় বাংলার লোকজসুরের সঙ্গে তাঁরআত্মীয়তা ঘটে।তারই অভিপ্রকাশ রবীন্দ্রনাথের স্বদেশী আন্দোলনের সমসাময়িক গানগুলি, বিশেষত আমার সোনারবাংলা
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের নিজের ভাষায় – ‘আমার লেখা যারা পড়েছেন, তাঁরা জানেন বাউল পদাবলীর প্রতি আমার অনুরাগ আমি অনেক লেখায় প্রকাশ করেছি। শিলাইদহে যখন ছিলাম, বাউল দলের সঙ্গে আমার সর্বদাই দেখা সাক্ষাৎ আলাপ- আলোচনা হতো। আমার অনেক গানে আমি বহু সুর গ্রহন করেছি এবং অনেক গানে অন্য রাগরাগিনীর সাথে আমার জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে বাউল সুরের মিল ঘটেছে। এর থেকে বোঝা যাবে, বাউলের সুর বানী কোন এক সময় আমার মনের মধ্যে সহজ হয়ে মিশে গেছে। আমার মনে আছে, তখন আমার নবীন বয়স- শিলাইদহ (কুস্টিয়া) অঞ্চলের এক বাউল একতারা হাতে বাজিয়ে গেয়েছিল -
কোথায় পাবো তাঁরেআমার মনের মানুষ যেঁরে
হারায়ে সেই মানুষে- তাঁর উদ্দেশে
দেশ বিদেশে বেড়াই ঘুরে
(এই গানটি গেয়েছিল-ফকির লালন শাহের ভাবশিষ্য গগন হরকরা। যার আসল নাম বাউল গগনচন্দ্র দাস।)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজের ভাষায়, বাউলের গানের কথা সুরের মাধুর্য আমাকে এতোই বিমোহিত করেছিলো যে, আমি সেই সুর ছন্দে
বাংলাদেশকে মাতৃরূপ জ্ঞানে লিখেছি -
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি,
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস
আমার প্রাণে বাঁজায় বাঁশি \’
যা বর্তমানে রক্তস্নাত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় জাতীয় সঙ্গীত। রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশকে মাতৃ-জ্ঞানে ভালোবেসে ,শ্রদ্ধায়, ভক্তি-প্রেমে, অন্তরে সমস্ত চেতনায় লালন শাহের সুর ছন্দে রচনা করেছিলেনআমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি অর্থাৎ, আমাদের রক্তের ঝর্ণাধারার বিনিময়ে অর্জিত জাতীয় সঙ্গীত ভাষা শব্দ বিন্যাসে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ দৃশ্যমান হলেও ; সুর ছন্দে এবং প্রেরণার উৎস হিসেবে বাউল সম্রাট লালন শাহের অবদানকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই