জাহানারা ইমাম ও তার ছেলে রুমির কথোপকথন
----------------------------------------------
(২১ এপ্রিল , বুধবার, ১৯৭১)
রুমী: আম্মা, দেশের এ অবস্থায় তুমি যদি আমাকে জোর করে আমেরিকায় পাঠিয়ে দাও, আমি হয়তো যাব শেষ পর্যন্ত।
কিন্তু তাহলে আমার বিবেক চিরকালের মতো অপরাধী করে রাখবে আমাকে।
আমেরিকা থেকে হয়ত বড় ডিগ্রি নিয়ে এসে বড় ইঞ্জিনিয়ার হবো; কিন্তু বিবেকের ভ্রুকুটির সামনে কোনদিনও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না।
তুমি কি তাই চাও আম্মা?
জাহানারা ইমাম: …(আমি জোরে দুই চোখ বন্ধ করে বললাম) …ঠিক আছে, তোর কথাই মেনে নিলাম। দিলাম তোকে দেশের জন্য কোরবানি করে।
যা, তুই যুদ্ধে যা।..."
-----------------------------------------------------------
এই হল দেশ প্রেম,এক ছেলে নিজেকে দেশের জন্য বিলিয়ে দেয় আর তার মা ছেলের মায়া ত্যাগ করে ছেলেকে বিলিয়ে দেন দেশের জন্যে।
কিন্তু তাদের এই আত্মত্যাগ কি সফল হয়েছে?
না হয়নি...আজও এদেশে রাজাকারেরা সদর্পে ঘুরে বেড়ায়...আজও তাদের লুলুপ দৃষ্টি আমাদের এই মাতৃভূমির প্রতি...আজও আমরা শঙ্কায় আছি তাদের বিচার
হবে কিনা?
কিন্তু তার থেকেও দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমরা যখন রাজাকার এর বিচার চাই বলে বলিষ্ঠ পদক্ষেপে আগাই তখন কিছু লোক রাজাকার এর মানবাধিকার
রক্ষার জন্য মরিয়া হয়ে থাকে...এই স্বাধীন দেশে রাজাকার বাঁচাবার জন্য তারা আন্দোলন করে,তারা রাজাকারের পক্ষে কথা বলে...তারা রাজাকারকে আদর্শ মনে করে।
লাখো মুক্তিযোদ্ধা কি এ জন্যই প্রান দিয়েছিল?তারা কি জীবনবাজি রেখে দেশকে এই জন্যই স্বাধীন করেছিলেন যাতে রাজাকারের পক্ষে মানুষ
কথা বলে?তাদের রক্ত কি বৃথা যাবে?
প্রশ্নগুলো প্রশ্নই থেকে যায়...আর রাজাকারেরা ব্যঙ্গ হাসি হাসে।