Monday 16 July 2012

ভারতীয় সিনেমা আমদানী কি ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন ঘটাবে?

 

বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি বোধহয় বর্তমানে সবচে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দেশে ১৯৯০-৯১ সালে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল প্রায় ১২৩০টি, ২০১০ সালে এই সংখ্যা নেমে এসে দাড়িয়েছে ৭৪২-এ। ঢাকার ৪৪টি সিনেমা হলের মধ্যে এখন আছে ৩৩টি, এগারোটিকে গুড়িয়ে দিয়ে গড়ে উঠেছে বিশাল অট্টালিকা। গুলিস্তান, শ্যামলী, নাজ, লায়ন, স্টার, শাবিস্তান, তাজমহল সিনেমা হারিয়েছে অনেক আগেই। এই দুরাবস্থা দেখে সিনেমাহলগুলোকে টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতীয সিনেমা আমদানীর পরামর্শ দিচ্ছেন বোদ্ধারা। আবার বিপক্ষেও মতামত পাওয়া যাচ্ছে। ভারতীয় সিনেমা আমদানীল বিপক্ষে আন্দোলন করছেন সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির সাথে জড়িত কলাকুশলীরা, তাদের সাথে যোগ দিয়েছে বাম মানসিকতার বুদ্ধিজীবিরা এবং ভারতের আগ্রাসন বিরোধীরা। মানববন্ধন সহ অন্যান্য কর্মসূচী পালন হয়েছে। সিনেমার প্রযোজক-পরিচালকরা হুমকী দিয়েছেন যেসকল সিনেমাহল ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শন করবে তাদেরকে ভবিষ্যতে বাংলা সিনেমা প্রদর্শনের সুযোগ দেয়া হবে না। প্রদর্শকরাও পাল্টা হুমকী দিয়ে বলেছেন যে, প্রয়োজনে তারা ইংরেজি সিনেমা আমদানী করে প্রদর্শন করবেন। দুই পক্ষের এই হুমকী যে নিস্ফল আক্রোশ থেকে সৃষ্ট সেটা বোঝা যায়, কারণ যে সকল সিনেমাহল ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শন করছে তারাই বাংলাদেশী সিনেমার প্রধান ক্রেতা, সিনেমাহলগুলোর মধ্যে তাদের অবস্থাই অধিকতর ভালো। কাহিনী আর অভিনয়ের দুরাবস্থা নিয়েও বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে বছরে ১০০টি সিনেমা মুক্তির ইতিহাসও আছে। গত এক দশকের তুলনায় ২০১০ সালে নির্মিত সিনেমার সংখ্যা সবচে কম, মাত্র ৬৩টি। ভয়াবহতার এই শেষ নয়, ২০১১ সালের প্রথম ছয় মাসে, জানুয়ারী থেকে জুন মাস পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছে মাত্র ১৯টি সিনেমা, বিনিয়োগকৃত টাকার পরিমান মাত্র ৩০ কোটি টাকা।সম্প্রতি প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে এ বছরে মোট মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার সংখ্যা দাড়াবে ৪৫-এ এবং আগামী বছরে সম্ভাব্য মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার সংখ্যা মাত্র ৩০টি। সুতরাং, ৯টি সিনেমাহল সিনেমা প্রদর্শন না করলে ক্ষতিগ্রস্থ দুপক্ষই হবে, প্রযোজক তার লগ্নি তুলে আনতে ব্যার্থ হবে, সিনেমাহলগুলোও ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবে।
যারা ভারতীয় সিনেমা আমদানীর পক্ষে কথা বলেছেন তারা যে সকল যুক্তি প্রদর্শন করেছেন তার মধ্যে সিনেমাহলগুলোকে বাচিয়ে রাখা এবং উন্নয়ন, সিনেমা পরিচালকদের আরও উন্নতমানের সিনেমা নির্মানে উৎসাহিত করা, দর্শকদের ভালো সিনেমা দেখার সুযোগ তৈরী করে দেয়া ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ন। এই পক্ষ একটি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির সাথে জড়িত সকল পক্ষকে বিবেচনায় রেখে সিনেমার আমদানীল কথা হয়তো বলছেন না। মোটাদাগে একটা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রির মতোই চারটি অংশ রয়েছে।

১. কারখানা যেখানে সিনেমা নির্মিত হয় – এফডিসি
২. পণ্য – সিনেমা
৩. বিক্রেতা – সিনেমাহলসমূহ
৪. ক্রেতা – সিনেমার দর্শক

প্রত্যেকেটা অংশই একটি ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে বেশ গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। এদের একটির অভাবে অন্যটি ঠিকমতো চলতে পারে না এটা সত্যি কিন্তু কারখানা ব্যতীত বাকী সকল পক্ষই বেকার অবস্থায় বসে থাকতে বাধ্য। এফডিসি যদি না থাকে তবে সেখান থেকে ভালো মানের সিনেমা নির্মান হওয়ার সম্ভাবনা আরও কমবে, এবং সিনেমা নির্মান না হলে সিনেমাহলের বিক্রেতারা পণ্যের অভাবে বিক্রি বন্ধ রাখবে। বিক্রেতাদের স্বার্থের কথা চিন্তা করলে অন্য দেশ থেকে সিনেমা আমদানী করার যুক্তিকে গ্রহণযোগ্য মনে হয়, কিন্তু সেক্ষেত্রে দেশীয় কারখানা এফডিসিকে সম্পূর্ন অকার্যকর করে রাখা হবে। লক্ষ্যনীয়, ধরেই নেয়া হচ্ছে যে ভারতীয় সিনেমা আমদানীর ফলে বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি মুখ থুবড়ে পড়বে, এবং উৎপাদন নির্ভর নয়, বরং আমাদানী নির্ভর হয়ে পড়বে। নির্মিত সিনেমার সংখ্যা শতাধিক থাকাকালীন সময়ে এফডিসি’র উন্নয়নে খুব বড় কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। উন্নত প্রযুক্তির এই যুগে বাংলা সিনেমা নির্মানের উপকরণসমূহ অনেক পুরোনো, বেশীরভাগই আশির দশক থেকে বহুল ব্যবহৃত। এফডিসি-তে ভালো মানের আধুনিক ক্যামেরার অভাব রয়েছে, সম্পাদনা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে, অভাব রয়েছে আরও কারিগরী উপকরণসমূহের। ফলে এফডিসি থেকে নির্মিত সিনেমাগুলোর ছবি এবং শব্দের গুনগত মান বাইরের দেশের ছবির তুলনায় অনেক খারাপ। বাংলাদেশে যে সকল ভালো সিনেমাগুলো নির্মিত হচ্ছে তাদের নির্মান প্রক্রিয়ার একটা বড় অংশ বিশেষত পোস্ট প্রোডাকশন ভারত কিংবা অন্য কোন তৃতীয় দেশের উপর নির্ভরশীল। ফলে তুলনামূলক ভালো সিনেমা নির্মাতারা একটি ভালো সিনেমা নির্মানের জন্য দেশীয় সহযোগিতা গ্রহন করতে পারছেন না। ভবিষ্যতে যখন এই নির্মিত সিনেমার সংখ্যা কমে গিয়ে ৩০-৪০ এর কোঠায় নেমে আসবে, তখন এফডিসিকে অবশ্যই বেশ বড় অংকের ক্ষতি বহন করতে হবে, সাবসিডি দিয়ে চলতে হবে এবং এ অবস্থায় এফডিসি’র সম্পূর্ন সংস্করনের তুলনায় এর বিলোপকেই সরকার পছন্দ করবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাংলাদেশে ব্যবহৃত ক্যামেরার একটি, ৮৩ মডেলের ৩৫মিমি ক্যামেরা।
স্বাধীনতার ৪০ বছর পরেও সুবিধাপ্রাপ্ত সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি মাথা তুলে দাড়াতে পারে নি, স্বাবলম্বি হতে পারে নি এই অজুহাতে ভারতীয় সিনেমা আমদানীর পক্ষ অবলম্বন করা যায়। কিন্তু সত্যিকার অর্থে সাবালকত্ব অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমান সহযোগিতা কি করা হয়েছে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে? সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে সহযোগিতা বলতে যদি শুধু এফডিসির নির্দিষ্ট অবকাঠামো এবং পুরোনো যন্ত্রপাতিকে বোঝানো হয়, তবে ইন্ডাস্ট্রি শুধু সাবলাকই হয় নি, যৌবনেও পা দিয়েছে। কারণ এই ইন্ডাস্ট্রির সহযোগিতা না নিয়েও গুটিকতক চলচ্চিত্রনির্মাতা সিনেমা নির্মান করছেন, দেশ বিদেশের সুনাম কুড়িয়ে আনছেন। প্রকৃতপক্ষে, সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন বলতে শুধু পুরোনো যন্ত্রপাতি দিয়ে সমৃদ্ধ একটি কারখানাকেই শুধু বোঝায় না, এর আধুনিকীকরণ এবং দক্ষ জনশক্তি প্রতিনিয়ত .



http://www.facebook.com/pages/We-Are-Against-Of-Indian-Movie-Import-In-Bangladesh/230511777021351

http://www.facebook.com/pages/Golpo-Bolun-%E0%A6%97%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AA-%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A7%81%E0%A6%A8/399208823450400

http://www.facebook.com/photo.php?fbid=10150974789458758&set=a.75009653757.74482.702423757&type=1&theater

http://www.facebook.com/montazurrahmanakbar.fd/info

http://www.facebook.com/minhazurrahmannayan